উত্তরবঙ্গের অন্যতম জেলা বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার রাধানগর গ্রাম থেকে মোকছেদ আলী ও মমতাজ বেগমের ৩য় ছেলে আমি মোঃ মিজানুর রহমান. ২০১৫ ইং বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫.০০ সহ এসএসসি শেষ করে ২০১৯ইং তে তড়িৎ প্রকৌশল (ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) শেষ করি স্বনামধন্য সরকারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে।
মোকছেদ আলী ও মমতাজ বেগমের ৪ ছেলে মেয়ের আমি ৩য় এবং ৪র্থ ছোট বোন। এরপর করোনা মহামারিতে বিশ্ব যখন থেমে যায়, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনাও শেষ তখন এই সুন্দর দেশ ও বিচিত্র পৃথিবী ঘুরে দেখার ভাবনা ও চ্যালেঞ্জটা মাথায় আসে!ক্যারিয়ারের অপার সম্ভবনাময় ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে দেশ ও পৃথিবী ভ্রমণ করার(ইবনে বতুতার মতো) পুর্ণ মনোবলের তাড়নায় উচ্চতর শিক্ষার ভর্তি প্রস্তুতি কোচিং এর মাঝপথ থেকে সরে এসে আজ এই পথে।
সেই ভাবনা থেকে দেশে নানান ভাবে ঘুরার পরিকল্পনা করতে থাকি। যার মধ্যে একটি হচ্ছে হিচহাইকিং বা অন্যের গাড়িতে লিফট নিয়ে ভ্রমণ(যা বাংলাদেশে প্রায় অনেকটাই নতুন ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়), ব্যাকপ্যাকিং করে ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করি দেশ বিদেশ।পরিকল্পনা করি ৬৪ জেলা আনাচে কানাচে কম খরচে ভ্রমণ করার! তারপর দেশের বেশ কিছু জেলাসহ ,গাড়িতে তেঁতুলিয়া টু টেকনাফ মোট ৩০০০+কি.মি. ভ্রমণ করেছি কোনো গাড়ির যাতায়াত খরচ ছাড়াই। এরপর চ্যালেঞ্জিং হিসেবেই এইবার পায়ে হেঁটে দেশের শেষ দুই প্রান্তে বাংলাবান্ধা তেঁতুলিয়া থেকে শাহ
পরীর দ্বীপ,টেকনাফ ভ্রমণ করার জন্যে বের হই। যা সম্পূর্ণ পায়ে হেঁটে।
এটি বাংলাবান্ধা থেকে শুরু করি ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ১১ঃ১৫ মিনিটের দিকে; মাঝে বগুড়াতে ৫ দিন গাজীপুরে ১ দিন , চট্টগ্রামে ১ দিন অবসর কাটানোর ফলে শেষ করেছি ১৯ই মার্চ সন্ধ্যা ৭ঃ৩৫ মিনিট অর্থাৎ মোট হাঁটার কার্যদিবস ছিল ১৯ দিন ওই সাতদিনের মধ্যে বগুড়ার ৫ দিন নিজ বাড়িতে অবস্থান করেছিলাম যার মধ্যে ৩ দিন ফুড পয়জনিং কারনে অসুস্থ ছিলাম তারপর সুস্থ হয়ে আবার হাঁটা শুরু করেছিলাম। এই ১৯ দিনের মাঝে গড়ে ৪৫-৫০কি.মি. হাঁটা ছিল ও মাঝে দুইদিন দিনাজপুর ও কুমিল্লার মধ্যে টানা ২৪ ঘন্টা করেও হাঁটা পড়েছে ফলে আমার এই ১৯ দিনে গড়ে হাঁটা পড়েছে প্রায় ৫০+কি.মি. স্বাভাবিক ভাবে শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত অবসর দিন সহ মোট ২৭ দিন হয়েছে আর হাঁটার কার্যদিন ১৯ দিন!
এই তেঁতুলিয়া টু টেকনাফ এর পথ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংযুক্ত রাস্তা যা পার করতে ১৪ টির মতো জেলা পার হয়েছি! যার জন্যে দিনে আমাকে প্রায় ১৬-১৮ ঘন্টা ব্যয় করতে হয়েছে।পথে যাদের সাথে দেখা হয়েছে তারা সবাই ভালোবাসা দিয়েছেন, কোনো বিপদের মুখে পড়িনাই! সবার সহায়ক ও ইতিবাচক মনো ভাব আমার এই ভ্রমণ কে আরো সহজ করেছে! পথে দেখা হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সাথে চেনা অচেনা নানান জনের সাথে এবং তাদের নানান ভাবে হেল্প ও আপ্পায়ন পেয়েছি! আশা করি আবার টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার পথে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হব না ইনশাআল্লাহ। ভ্রমণ পথে প্রতিদিন নিয়মিত ছালাত খাওয়া দাওয়া ও ফ্রেস হয়েছি!
বিশ্রাম রাতে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে বেশির ভাগ ফেসবুক অনলাইন থেকে পরিচিত দের সাথে যা আমার এই পায়ে হেঁটে ভ্রমণ কে ভালোবেসেছেন ও হেল্প করার চেষ্টা করেছেন । খাওয়া দাওয়া বিভিন্ন হোটেলে সম্পূর্ণ করেছিলাম!
এই পায়ে হেঁটে ভ্রমণ শুরু করার আগে আমার বগুড়া জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত ও আমার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্যারের সৌজন্য সাক্ষাত করেছিলাম! তারপর ভ্রমণ সময়ে বগুড়ায় উপস্থিত হলে আবার বগুড়া জেলা প্রশাসক স্যারের সাক্ষাৎ করেছিলাম!
এছাড়া দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে, চিররবন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে ভ্রমণ পথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পেরেছি সর্বশেষ টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে সাক্ষাৎ করেছি। ভ্রমণ সময়ে উপজেলা বা জেলা প্রশাসন কার্যসময়ের মধ্যে আসলে উপস্থিত হওয়া না যায় বলে সব গুলো জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারি নাই!
আমার এই ভ্রমণের প্রতিবাদী স্লোগান ছিল;
#ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যু দন্ড কার্যকর চাই।
#রক্ত দান করুন অন্যের প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করুন
#কারিগরি শিক্ষা গ্রহন করি বেকারত্ব দূর করি।
এই ভ্রমণ শেষ করে আবারো আমি পায়ে হেঁটেই টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ফিরতে চাই যা ২২ বা ২৩ই মার্চ থেকে আবারো শুরু করছি ইনশাআল্লাহ!
আর এই ভ্রমণের আমার ১৪ জেলা ৯৮০+কি.মি. রাস্তা ও পাড়ি দিয়েছি। যার স্মৃতি সরূপ ভ্রমণের ভিডিও, স্থির চিত্র ও অতিক্রান্ত দুরত্বের কার্যবলী সংরক্ষিত রয়েছে । যমুনা সেতুর উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে ও বাইসাইকেল নিয়ে পারাপারের কোনো সুযোগ নেই সেটা সেতু কর্তৃপক্ষ গাড়িতে পার করে দেন। সেতুর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে গাড়িতে পার হয়ে আবার পায়ে হেঁটে শুরু করেছিলাম!
এই ভ্রমণ আবার তেঁতুলিয়া গিয়ে শেষ করে একসাথে ডাবল পায়ে এগিয়ে তেঁতুলিয়া টু টেকনাফ টু তেঁতুলিয়া পায়ে হেঁটে শেষ করতে চাই!
আর আগামী শীতের মধ্যে পায়ে হেঁটে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করছি!ইনশাআল্লাহ
আমার এইসব ভ্রমণের বেশির ভাগ খরচ আমার পরিবারই বহন করেন!আর এই পায়ে হেঁটে ভ্রমণে বগুড়া জেলা প্রশাসন থেকে সহায়তা করেছিলেন!
২১শে ফেব্রুয়ারি – ১৯ই মার্চ ২০২২ইং
মোট দিনঃ ২৭ দিন
মোট হাঁটার কার্যদিনঃ ১৯ দিন
জেলা অতিক্রমঃ ১৪ টি
বাংলাবান্ধা তেঁতুলিয়া থেকে শাহ পরীর দ্বীপ টেকনাফ
একা পায়ে হেঁটে এই ভ্রমণ আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে অনেক কিছু বুঝতে , চলতে ভাবতে শিখিয়েছে, জীবনের অন্যতম এক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরে আমি অত্যন্ত খুশি ও এই ভ্রমণে আমার পরিবার ও আমাকে যারা কোনো না কোনো ভাবে সাহায্য করেছেন, সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন, শুভেচ্ছা
জানিয়েছেন, তাদের সবার প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ ও ভালোবাসা থাকবে! বিশেষ করে ধন্যবাদ আমার বগুড়া জেলা প্রশাসক স্যার কে! এছাড়াও ভ্রমণের পাশাপাশি আমি বিভিন্ন দৌড়,সাঁতার বিশেষ করে বাংলা চ্যানেল যা টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে সাঁতারের পথ, সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। #আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশা বাংলাদেশ থেকে পায়ে হেঁটে ২০২৪ইং সালের মক্কা-মদিনা হজ্বে উপস্থিত হওয়া! যার জন্যই আমার হেঁটে এই দেশ ভ্রমণ করার আগ্রহ বেশি যাতে মক্কা-মদিনার সফর সহজ ভাবে করতে পারি ও প্রমাণ করতে পারি যে আমি সেই দূরত্ব পাড়ি দিতে পারবি ইনশাআল্লাহ ! কাক্ষিত লক্ষ্যে পৌছার পথ সহজ হওয়ার দোয়া প্রার্থী।